সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৪ পূর্বাহ্ন
ধর্ম ডেস্ক:
সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রাযিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালার কাছে সঙ্গীদের মধ্যে উত্তম সঙ্গী হলো সেই ধরনের ব্যক্তি, যে তার নিজ সঙ্গীর কাছে উত্তম। আল্লাহতায়ালার দৃষ্টিতে প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তম হলো সেই ধরনের প্রতিবেশী যে তার নিজ প্রতিবেশীর কাছে উত্তম।’ সুনানে তিরমিজি
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখেরাতের প্রতি ইমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে সম্মান করে।’ সহিহ মুসলিম
ভিন্ন শব্দে আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘সে যেন তার প্রতিবেশীর প্রতি ভালো ব্যবহার করে।’ আর মুমিনরা মানুষদের মধ্যে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সর্বাপেক্ষা সদাচরণকারী এবং তাদের প্রতিবেশের হেফাজতকারী। হজরত আবু যার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে আবু যার! যখন তুমি তরকারি রান্না করবে তখন তাতে পানি বেশি দেবেযাতে ঝোলের পরিমাণ অধিক হয় এবং তোমরা তোমাদের প্রতিবেশীর প্রতি লক্ষ রাখবে।’ সহিহ মুসলিম
ঘরের সুখের অন্তর্ভুক্ত হলোউত্তম প্রতিবেশী। হজরত নাফে বিন আবদুল হারেস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিম ব্যক্তির সৌভাগ্যের অন্তর্ভুক্ত হলো প্রশস্ত বাড়ি, সৎ প্রতিবেশী ও সচল বাহন।’
আবুল জাহম আল আদাবিকে তার বসরা নগরীর বাড়ির জন্য এক লাখ দিরহাম দেওয়া হলো, তখন তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা আমার থেকে সাঈদ বিন আসের প্রতিবেশিত্ব কত দিরহাম দিয়ে ক্রয় করবে? তারা বলল, আপনি কি কখনো প্রতিবেশিত্ব ক্রয় করতে দেখেছেন? আবুল জাহম আল আদাবি বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি আমার ওই বাড়ি বিক্রয় করব না যার প্রতিবেশী এমন এক ব্যক্তি, যে আমি অনুপস্থিত থাকলে আমার খোঁজ নেন ও আমার পরিবারের হেফাজত করেন, আমাকে দেখলে স্বাগত জানান ও কাছে টেনে নেন, আমি কিছু চাইলে আমার প্রয়োজন পূরণ করেন ও অভিবাদন জানান এবং আমি যদি তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস নাও করি তবুও তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেন ও খেয়াল রাখেন। আল্লাহর শপথ! আমাকে যদি বাড়ির সমপরিমাণ স্বর্ণও দেওয়া হয় আমি তা নেব না, এমনকি তার দিকে তাকাবও না।’
হজরত সাওবান (রা.) বলেন, ‘যে প্রতিবেশী তার অপর প্রতিবেশীর প্রতি জুলুম করে ও তার ওপর বলপ্রয়োগ করে, ফলে সে তার নিজ বাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়, সে ধ্বংস হলো।’ আদাবুল মুফরাদ
ইমাম যাহাবি (রহ.) বলেন, ‘যদি পড়শি কবিরা গোনাহকারী হয়, আর এমতাবস্থায় সে যদি তা গোপন রাখে এবং তার দরজা বন্ধ রাখে, তখন অপর পড়শি যেন তা এড়িয়ে যায়। যদি তাকে গোপনে নসিহত ও সদুপদেশ করা সম্ভব হয় তবে তা উত্তম। আর যদি সে তার ফাসেকি কর্মকা- প্রকাশ্যে করে বেড়ায়, তখনো তাকে উত্তমভাবে এড়িয়ে চলতে হবে। অনুরূপভাবে সে যদি অধিকাংশ সময়ই নামাজ ত্যাগকারী হয়, তখন তাকে বারবার বিনয়তার সঙ্গে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করুন। নতুবা আল্লাহর জন্য তাকে বয়কট করুন। হতে পারে তার সঙ্গে কথা, সালাম বিনিময় ও দিকনির্দেশনা প্রদান বন্ধ করা ছাড়া অন্য উপায়ে তাকে বয়কট করার কারণে সে উপদেশ মেনে নেবে ও উপকৃত হবে। আপনি যদি তাকে অনবরত অবাধ্যতা ও বিরুদ্ধাচরণ এবং কল্যাণ থেকে দূরে অবস্থানকারীরূপে দেখতে পান, তাহলে আপনি তাকে পরিত্যাগ করুন ও তার প্রতিবেশী হওয়া থেকে সরে যাওয়ার যথাসম্ভব চেষ্টা করুন। যদি পড়শি লাজলজ্জা ও ঈর্ষাহীন হয়, তার স্ত্রী উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরা করে, তখনো তাদের থেকে স্থানান্তরিত হয়ে যান অথবা চেষ্টা করুন যেন আপনার স্ত্রী তার স্ত্রীর সঙ্গে হৃদ্যতা তৈরি না করে। কেননা এরূপ করলে তাতে অনেক ফেতনা-বিপর্যয় নিহিত রয়েছে। এমতাবস্থায় নিজের অসহায় নফসের ওপর আশঙ্কা করুন, আর তার ঘরে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকুন।’
হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে বললেন, ‘আমি ভালো কাজ করেছি না মন্দ কাজ করেছি তা কীভাবে জানতে পারব? তখন নবী করিম (সা.) বললেন, যখন তোমার প্রতিবেশীদের বলতে শুনবে যে, তুমি ভালো কাজ করেছো, তাহলে তুমি সত্যই ভালো কাজ করেছো। আর যখন তাদের মুখে শুনবে যে, তুমি মন্দ কাজ করেছো, তাহলে তুমি সত্যই মন্দ কাজ করেছো।’ সুনানে ইবনে মাজাহ
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! অমুক মহিলা সম্পর্কে বলা হয় যে, সে বেশি বেশি নামাজ ও রোজা পালন করে এবং দান-সদকা করে। তবে সে তার মুখের ভাষা দ্বারা প্রতিবেশীদের কষ্ট দেয়। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ওই নারী জাহান্নামে যাবে। লোকটি আবারও বললেন, আরেকজন মহিলা রয়েছে যার সম্পর্কে জানা যায় যে, সে সামান্যই নামাজ, রোজা ও দান-সদকা করে এবং সে পনিরের টুকরো সদকা করে। কিন্তু সে নিজ জিভ দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। তিনি বললেন, সে জান্নাতে যাবে।’ মুসনাদে আহমাদ
ব্যভিচারের সবচেয়ে জঘন্য ও অশ্লীল প্রকার হলো, এক প্রতিবেশী আরেক প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করা। হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি নবী করিম (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, কোন গোনাহ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড়? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য অংশীদার সাব্যস্ত করা অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, এ তো সত্যিই বড় গোনাহ! আমি বললাম, তারপর কোন গোনাহ? তিনি বললেন, তুমি তোমার সন্তানকে এই ভয়ে হত্যা করবে যে, সে তোমার সঙ্গে আহার করবে। আমি আরজ করলাম, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে তোমার ব্যভিচার করা।’ সহিহ বোখারি ও মুসলিম
মানব হত্যার পরই প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচারের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে এর বহুবিধ অনিষ্টের প্রতি লক্ষ রেখে। যেমনবীর্যের সংমিশ্রণ, বংশ নির্ণয়ে সংশয়ের সৃষ্টি, অপমানিত হওয়া এবং প্রতিবেশীকে কষ্ট প্রদান। হাদিসে ‘স্ত্রী’র বিষয়টি উল্লেখ করে মূলত প্রতিবেশীর হকের গুরুত্বের প্রতি সতর্ক করা হয়েছে। আর প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে অপকর্মের ব্যাপারে সেরূপ আত্মমর্যাদা রাখা ওয়াজিব যেরূপ নিজের স্ত্রীর অপকর্মের ব্যাপারে আত্মমর্যাদা রাখা হয়।
হজরত মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) তার সাহাবিদের ব্যভিচার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তারা বললেন, হারাম যা আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) হারাম করেছেন। তিনি বললেন, কোনো ব্যক্তির দশ নারীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে তার ব্যভিচারের চেয়ে হালকা পাপ। পুনরায় তিনি তাদের চুরি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারা বললেন, হারাম যা মহামহিম আল্লাহ ও তার রাসুল হারাম করেছেন। তিনি বললেন, কোনো ব্যক্তির দশ পরিবারে চুরি করা তার প্রতিবেশীর ঘরে চুরি করার চেয়ে হালকা অপরাধ।’ ইমাম বোখারি আদাবুল মুফরাদে হাদিসটি সংকলন করেছেন।
ভয়েস/আআ